Pradip DasGupta: একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেন না, পরপারে মিলন হল নির্মলা ও প্রদীপের, অদ্ভূত তাঁদের প্রেম কাহিনী

Pradip DasGupta: একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেন না, পরপারে মিলন হল নির্মলা ও প্রদীপের, অদ্ভূত তাঁদের প্রেম কাহিনী
২০২২ সালের ৩১ জুলাই। বাংলা সঙ্গীত জগতের এক প্রদীপ নিভে যায়। প্রয়াত হন নির্মলা মিশ্র। বছর ঘুরে ২০২৩-এর ৩১ জুলাই পেরিয়ে কয়েক দিন মাত্র কেটেছে। চলে গেলেন স্বামী প্রদীপ দাশগুপ্ত। এ যেন এক অদ্ভূত সমাপতন। প্রদীপ দাশগুপ্ত শুধু যে নির্মলা মিশ্রের স্বামী ছিলেন তাই নয়। তিনি নিজেও একজন গুণী শিল্পী। অনেক গান লিখেছেন, আবার সুরও দিয়েছেন। ওড়িয়া গান গাইতে গিয়ে দুজনের আলাপ হয়। সেই আলাপ কখন ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় নিজেরাও বুঝতে পারেননি। তারপর একে অপরের হাত ধরে দীর্ঘ পথচলা। হয়ে গেলেন ‘চিরদিনের হাসি কান্নার সাথী’। ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ঠিক দুপুর ১২টায় সুরলোকে পাড়ি দিলেন সুরকার, গীতিকার প্রদীপ দাশগুপ্ত।
Pradip DasGupta: একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেন না, পরপারে মিলন হল নির্মলা ও প্রদীপের, অদ্ভূত তাঁদের প্রেম কাহিনী

নির্মলা ও প্রদীপ দাশগুপ্তের প্রেম কাহিনী

বাংলা গানের জগতে তখন খুব ভালো একটা জায়গা করতে পারছিলেন না নির্মলা মিশ্র। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি, লতা ও আশাদের দাপট তখন। সেই সময় গান গাইতে ওড়িয়া ফিল্ম জগতে চলে গেলেন নির্মলা। তিনি তখন ওড়িয়া গানের লতা-আশা সব। একাধিক ওড়িয়া ছবিতে গান গেয়েছেন। বিশেষ করে ঠাকুর-দেবতার গান তাঁর কণ্ঠে খুব হিট হত। সেখানের একটি রোগা পাতলা ছেলের সঙ্গে গান গাইতেন তিনি। অনেক সিনেমায় ডুয়েট গেয়েছেন। সেই ছেলের নাম প্রদীপ দাশগুপ্ত। তখন পরিচয় হয়নি। পরিচয় হল নিজের বাড়িতে। মেয়ের জন্য ছেলে খুঁজছিলেন নির্মলার মা। সেই খবর প্রদীপ দাশগুপ্তের কানে পৌঁছায়। তিনি যে মনে মনে কখন মন দিয়ে ফেলেছিলেন তা নির্মলা মিশ্র জানতে পারেননি। রোগাপাতলা ছেলেকে দেখে চিনতে পারলেন গায়িকা। বললেন, আরে আমি তো আপনাকে চিনি। প্রদীপের নম্র-ভদ্র ব্যবহারে মন ছুঁয়ে গেল নির্মলার মায়ের। পচ্ছন্দ করে ফেললেন মেয়ের জন্য। বিয়ে হল। প্রদীপ ছিলেন আদর্শ স্বামী। স্ত্রীকে গানের জগতে এগিয়ে দিতে নিজের কেরিয়ার ছেড়েছেন। বয়স্ক কালে স্ত্রীর অসুস্থতার সময় সেবা করে গিয়েছেন। ভালোবাসা সত্যি এমনি হয়।

ফুলশয্যার গল্প

নির্মলা ও প্রদীপের ফুলশয্যার কাহিনী মন ছুঁয়ে যায়। ওই দিন রাতে নববধূর হাতে একটি চিরকুট উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছিলেন। অবাক হয়েছিলেন নির্মলা মিশ্র। নতুন বউকে সবাই আংটি উপহার দেয়। বদলে শুধু চিরকুট ? সেই কাগজ খুলে দেখলেন লেখা আছে গান-

“আমি তো তোমার চিরদিনের

হাসি কান্নার সাথী।

সেদিন থেকে যেদিন তুমি

মন নিলে আর মন দিলে।

আমি তো তোমার চিরদিনের

হাসি কান্নার সাথী”।
Pradip DasGupta: একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেন না, পরপারে মিলন হল নির্মলা ও প্রদীপের, অদ্ভূত তাঁদের প্রেম কাহিনী

তৈরি হল কালজয়ী গান। যার লেখক আর সুরকার ছিলেন প্রদীপ দাশগুপ্ত নিজে। তবে গানের জগতে তিনি যোগ্য সম্মান পাননি। তাই অভিমানে সঙ্গীত জগত থেকে সরে যান। তবে নির্মলা মিশ্রের ম্যানেজার ছিলেন প্রদীপ বাবু। অত্যন্ত ভদ্র ও সজ্জন মানুষ ছিলেন তিনি। তাই অনেকে গান লিখেও ক্যাসেটে নাম পর্যন্ত দিতেন না। টাকা ঠিকমতো মেটাতেন না। তাই অনেক কালজয়ী গানের স্রষ্টা ছিলেন প্রদীপ দাশগুপ্ত। তা অনেকে জানতেই পারেননি। চেতলার ফ্ল্যাটে দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে থাকতেন। পুত্রভাগ্য ভালো ছিল না। ছেলে বিয়ের পর আলাদা হয়ে যান। বউমা কোনওদিন শ্বশুর-শাশুড়ির খোঁজ নিতেন না। ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যান প্রদীপ বাবু। ছেলে বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিল। শেষ বয়সে অসুস্থ স্ত্রীর সেবা নিজে করতেন বৃদ্ধ প্রদীপ বাবু। ছেলে খোঁজ নেয়নি। একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতেন না। স্ত্রীর মৃত্যু তাঁর কাছে ছিল বন্ধু হারানোর মতো। এবার সেই বন্ধুর কাছে চলে গেলেন প্রদীপ দাশগুপ্ত।

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.