গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল বলতে গেলে সারা ভারতে রাজত্ব করেছে আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা। প্রথমেই আসে কন্নড় ভাষার ‘কান্তারা’ সিনেমার কথা। না কোন পরিচিত স্টার, না হিট মিউজিক, কিছুই নেই । তাসত্ত্বেও শুধুমাত্র গল্প আর অসাধারণ পরিচালনার গুণে কিভাবে সিনেমা হিট করাতে হয় দেখিয়ে দিয়েছিল ‘কান্তারা’। সারা দেশজুড়ে দাপিয়ে ব্যবসা করেছে । হিন্দি ডাবিং RRR দেখতে তো মানুষ রীতিমতো লাইন দিয়েছিল। শুধুমাত্র দেশেই রাজামৌলির ছবি হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে । তারপর বিদেশের বক্স অফিস তো আছেই। এখন গোল্ডেন গ্লোব জেতার পর অস্কারের দৌড়ে RRR। হয়তো শেষ পর্যন্ত বাজিমাত হয়ে যাবে। পাশাপাশি একটি অত্যন্ত অল্প বাজেটের গুজরাটি ছবিও অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে । আর এইসব দেখে কাঁপছে বলিউড। কারণ গত কয়েক দিনে বিরাট উল্লেখযোগ্য হিট তেমন কিছুই নেই হিন্দিতে। পাশাপাশি, ঈশান কোণে মেঘ লাগার মতো ধীরে ধীরে উত্থান হতে শুরু করেছে ওডিয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সম্প্রতি তাদের ‘দমন’ (Daman Movie Odia) মুভি সারা ভারতে সাড়া ফেলেছে। কারণ অবশ্যই ছবির কন্টেন্ট। যেটাই এখন আসল হিরো।
হিন্দিতেও রিলিজ হচ্ছে দমন (Daman Movie Odia)
ওড়িশাতে ছবির ব্যাপক সাফল্যের পর ‘দমন’ ছবির নির্মাতারা সিনেমাটিকে সারা ভারতে রিলিজের পরিকল্পনা নিয়েছেন। সম্প্রতি ছবির হিন্দি ডাবিংয়ের ট্রেলার উদ্বোধন হল । উপস্থিত ছিলেন বলিউড স্টার অজয় দেবগন। তিনি আঞ্চলিক ছবির আরও উত্থানের পক্ষে বলেন । হিন্দিতেও ‘দমন’ ভালো ব্যবসা করবে বলে মনে করা হচ্ছে । গত বছর ৪ নভেম্বর ওড়িয়া ভাষায় ছবিটি রিলিজ করেছিল । রিলিজের পর থেকেই ছবির বিষয়বস্তু এবং মেকিংয়ের জন্য চর্চায় চলে আসে। ওড়িয়া সোশ্যাল ড্রামা এই ছবি ওড়িশার ৫১টি হলের পাশাপাশি বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, দিল্লি, সুরাত, কলকাতা, চেন্নাই এবং পুনের ১৫ টি সিনেমা হলে রিলিজ করে। প্রধান চরিত্রে বাবুসোনা মোহান্তি এবং দীপান্বিত দেশমহাপাত্রের অভিনয় প্রশংসা করেন সমালোচকরা। ওড়িশা এবং বাইরের রাজ্য থেকে পজিটিভ রেসপন্স পাওয়ার পর নির্মাতার হিন্দিতে ছবিটি রিলিজ করার প্ল্যান করেন । অবশেষে ৩ ফ্রেবুয়ারী ছবিটি হিন্দিতে মুক্তি পাচ্ছে।
দমন (Daman) ছবির হাত ধরে উঠে এল ওড়িয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি
ওড়িশাতেও যে একটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে তা বোধহয় এতদিন কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনত না। কারণ, পাতে দেওয়ার মতো ছবি ওডিয়া ভাষায় তৈরি হত না। বস্তাপচা পারিবারিক গল্প , নয়তো ভক্তিমূলক ছবি। এর বাইরে ওডিয়া ছবি বেরতে পারেনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সবই পালটায়। নতুন প্রজন্মের হাত ধরে উঠে আসছে ওডিশি ছবি। ‘দমন’ ছবি তার উদাহরণ। বায়োগ্রাফিক্যাল ছবি হলেও বিষয়বস্তু মানুষকে স্পর্শ করেছে। ছবির পরিচালক বিশাল মৌর্য এবং দেবীপ্রসাদ লেংকা । ছবিটি ইতিমধ্যেই করমুক্ত ঘোষণা করেছে ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক সরকার । মূলত যে সব স্বাস্থ্য কর্মী প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রামে গিয়ে কাজ করেন তাঁদের উদ্দ্যেশ্যে ছবিটি উৎসর্গ করা হয়েছে । কবে শিখবে বাংলা সিনেমা ? সেই এক ধরনের শহুরে গল্প থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের গল্প কবে বলতে শিখবে বাংলা ছবির জগৎ ? তামিল মুভির রিমেক ভুলে নিজস্বতায় নজর না দিলে কপালে খুব দুঃখ আছে। অনেক পিছিয়ে থাকা ওড়িশা ছবি আজ সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। আর বাংলা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।
Daman: এক নজরে ছবির গল্প
সিদ্ধার্থ একজন নবীন পাস করা ডাক্তার। ভুবনেশ্বর থেকে সদ্য পাস করে আদিবাসী এলাকা মালকানগিরিতে পোস্টিং পান। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সরকারি টাকায় পাস করা ডাক্তারকে পাঁচ বছর আদিবাসী এলাকায় কাজ করতেই হবে। নাহলে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই ইচ্ছা না থাকলেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই আদিবাসী এলাকায় যান সিদ্ধার্থ । অনেক কষ্ট করে তিনি গ্রামে পৌঁছান । সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ফারমাসিস্ট রবীন্দ্রের । এলাকাটি আসলে মাওবাদী প্রভাবিত। অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে তাঁর দিন কাটে। একদিন ঠিক করেন রিজাইন দিয়ে পালিয়ে যাবেন , তখনই এক আদিবাসী গ্রামবাসী তাঁর অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আসেন। বলেন মেয়েকে ভূতে ধরেছে । ঠিক করে দিন। পরীক্ষা করার পর সিদ্ধার্থ বুঝতে পারেন, মেয়েটির ম্যালেরিয়া হয়েছে । কিন্তু তিনি মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেন না। তখন গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলে ১৫১টি গ্রামে ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতায় নামেন তিনি। কিন্তু মাওবাদীরা তাঁকে অপহরণ করে ভয় দেখায়। অসহায় সিদ্ধার্থ কিভাবে এই যুদ্ধে জয়ী হয় , সেটাই এই ছবির বিষয় ।
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box