Viral: রোজগার নেই, চলছে না সংসার, বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিলেন বাদাম কাকু

রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন কাঁচা বাদাম। টাকার বিনিময়ে নয়। ফেলে দেওয়া বা বাতিল জিনিসের বিনিময়ে। ভোর থেকে উঠে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চলত বেচাকেনা। বিক্রিতে একটু অভিনবত্ব আনতে গান বেঁধে ছিলেন। নিজের সুর করে সেই গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন। গানের তেমন কিছু তিনি বোঝেন না। তবুও তাঁর গান মানুষের ভালো লাগত। গোল করে ঘিরে ধরে সেই গান শুনত। একদিন কেউ মোবাইলে সেটা রেকর্ড করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন। তারপর আর কি ? যা হবার তাই হল। viral হয়ে গেল সেই গান। রাতারাতি বিখ্যাত হলেন বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ ভুবন বাদ্যকর। তাঁর গান শুধু আর গ্রামে সীমিত রইল না। ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে, সারা বিশ্বে। বেরল ‘কাঁচা বাদাম’-এর রিমিক্স। সেটা যেন আরও বেশি হিট হল।

কত মানুষ দেখা করতে গ্রামে আসতে লাগল। ইউটিউবাররা ভিডিও তুলতে লাগল। মা লক্ষ্মীর কৃপায় দু-চার পয়সার মুখ দেখতে লাগলেন ভুবন বাবু। অবস্থা ফিরতে লাগল। নানা দিকে ডাক আসা শুরু হল। তাতে ব্যাংকে মোটা টাকা জমা হওয়াও শুরু হতেই ভাঙা মাটির বাড়ি পাকা করলেন ভুবন বাদ্যকর। তাঁর দালান বাড়ি দেখে গ্রামের সবাই অবাক। এমন বাড়ি গ্রামেও হয় ? ভিতরের ডেকেরোশন ছিল দেখার মতো। খুব সখ ছিল একদিন সমুদ্র দেখতে যাবেন। অভাবের সংসারে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবা পাপ। টাকা হাতে আসতেই ঘুরে এলেন দীঘা। কিনলন গাড়ি। কিন্তু গাড়ির সুখ বেশি দিন সহ্য হল না। এক্সিডেন্ট হয়। তবে অল্পের উপর বেঁচে যান ভুবন বাদ্যকর। ভালোমন্দ মিলিয়ে দিন ভালোই কাটছিল।

ঠকিয়ে নিল গান

সিউড়ির এক মিউজিক কোম্পানি একদিন বাড়িতে হাজির। দিল লোভনীয় প্রস্তাব। কাঁচা বাদাম গান তাঁদের দিলে মাসে মাসে মোটা টাকা দেবেন তাঁরা। লেখাপড়া জানেন না ভুবন বাবু। তারই সুযোগ নিল সেই কোম্পানি। কন্ট্যাক্ট পেপার না পড়েই টিপছাপ দিলেন। ব্যস, ঘটে গেল সর্বনাশ। প্রথম মাসে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল সেই কোম্পানি। তারপর থেকে ফক্কা। কোথাও আর কাঁচা বাদাম গান উচ্চারণ করতে পারেন না। কারণ কপিরাইট বসিয়ে দিয়েছে সেই কোম্পানি। গান গেল, টাকা গেল, সব গেল। নিজের পাকা বাড়িতেও আর থাকতে পারেন না। শাসক দলের গুন্ডারা এসে রোজ তোলা চায়। কোথা থেকে দেবেন এত টাকা ? তাই বাড়ি ছেড়ে সিউড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করলেন। এদিকে রোজগার বন্ধ। দুইএকটি গান বেঁধে ছিলেন। কিন্তু সেগুলি তেমন চলেনি। টাকা আসেনি।

গ্রামে আবার ফিরলেও সংসার ভালো চলছিল না। ছেলের সামান্য রোজগারে কোনও রকমে দিন কাটে। তাই ঠিক করেছেন। আবার পুরনো পেশায় ফিরবেন। বাদাম বিক্রি করবেন। তবে গ্রামে গ্রামে ঘিরে আর বিক্রি নয়। বাড়িতেই কাঁচা বাদাম ভেজে বিক্রি করবেন। ব্যবসা শুরু করছেন তিনি। একদিন যে বাদাম এত আলো দেখিয়েছিল, ভুবন বাবুর আশা সেই বাদাম আবার লক্ষ্মীর মুখ দেখাবে।

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.