সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন

নয় বছর হয়ে গেল তিনি নেই। তবু তিনি আছেন বাঙালির ভালোবাসায়, প্রেমের অনুভূতিতে। তিনি সুচিত্রা সেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারীর সকাল ছিল বড় বেদনার। এই জগত ছেড়ে অন্য ভূবনে পাড়ি দেন মিসেস সেন। দীর্ঘ দিন নিজেকে অন্তরালে রেখেছিলেন। কিন্তু বাংলা সিনেমার মহানায়িকাকে নিয়ে জল্পনা কখনো কমেনি । এটা বোধহয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একটা মানুষ কয়েক দশক ধরে নিজেকে লুকিয়ে রাখলেন, আর তাকে নিয়ে চর্চা বা আলোচনা বিন্দুমাত্র কমেনি । তিনি কেমন দেখতে হয়েছেন ? এই প্রশ্ন প্রত্যেক বাঙালির মনে ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু হায় ! সেই প্রশ্নের কোন উত্তর তাঁর শেষ দিন পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। মৃত্যুতেও নিজেকে অন্তরালে রাখেন তিনি। এটাই ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছা। সিনেমার পর্দায় সেই ভুবনমোহিনী হাসি চির অনন্ত হয়ে রয়ে গেল। চির যৌবনা হয়ে থেকে গেলেন সুচিত্রা সেন। কেউ জানতে পারল না বৃদ্ধা বয়সে কেমন দেখতে হয়েছিলেন মহানায়িকা। তাই থাক। বাংলা সিনেমা প্রেমীর মনে তিনি চির যৌবনা হয়ে থেকে যাবেন । বাঙালির শ্বাশত প্রেমের প্রতীক হয়ে থেকে যাবেন আমাদের সুচিত্রা সেন। আমাদের একান্ত আপনার। অত্যন্ত গর্বের।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
Unknown fact about Suchitra Sen

জন্ম- ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সোমবার ব্রিটিশ শাসিত বাংলার পাবনায়, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে। ভালো নাম রমা দাশগুপ্ত, ডাক নাম কৃষ্ণা। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে অবসর নেন। মা ইন্দিরা দেবী গৃহকত্রী।

ভাইবোন- নিমাই দাশগুপ্ত, গৌতম দাশগুপ্ত, উমা দাশগুপ্ত, রুনা দাশগুপ্ত, হীনা দাশগুপ্ত, লীনা দাশগুপ্ত

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
বিবাহ- মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায় । স্বামী দিবানাথ সেন ছিলেন বিখ্যাত শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে।

সুচিত্রা সেন প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি বিয়ের পর এমনকি মা হওয়ার পর সিনেমাতে অভিনয় শুরু করেন ।
সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
সহকারী পরিচালক নিতীশ রায় তাঁর নাম রমা থেকে পাল্টে সুচিত্রা সেন রাখেন। কারণ, রমা সিনেমার জন্য ঠিক কার্যকর নয় বলে মনে হয়েছিল তাঁর ।

উত্তম কুমার -সুচিত্রা সেন ছিলেন বাংলা ছবির চিরকালীন জুটি। পুরো কেরিয়ারে ৬০ টি ছবির মধ্যে ৩০ টি ছিল উত্তম কুমারের সঙ্গে ।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
সুচিত্রা সেন নিজের কণ্ঠে একাধিক গান রেকর্ড করেছিলেন ।

বলিউডের অভিনেতাদের মধ্য সঞ্জীব কুমার তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যখনই কলকাতায় আসতেন একবার অনন্ত সুচিত্রা সেনের বাড়ি যেতেন ।


সুচিত্রা সেন রাজ কাপুরকে একদম পচ্ছন্দ করতেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন – একবার উনি আমার বাড়িতে এসে ফিল্মের অফার দিয়েছিলেন। হঠাৎ আমার পায়ের কাছে বসে একতোড়া গোলাপ দিয়ে অফার দেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে রিজেক্ট করি । কারণ তাঁর ব্যক্তিত্ব আমার ভালো লাগেনি। একজন পুরুষ মানুষ এইভাবে পায়ের তলায় বসে থাকবেন, দেখতে মোটেই শোভা পায় না।

সব সময় নিজের মর্জিতে চলতে ভালোবাসতেন সুচিত্রা সেন। কাজের ক্ষেত্রেও তাই। একবার হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির শ্যুটিং গোলামাল বাঁধে । পরিচালক যেমন চাইছিলেন, সুচিত্রা সেন তেমনটা করতে রাজি ছিলেন না। এই নিয়ে দুজনের ঝগড়া বাঁধে । সুচিত্রা সেন উঠে চলে যান । শেষ পর্যন্ত পরিচালককে হার মানতে হয়েছিল।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
২০০৫ সালে তাঁকে দাদা সাহেব ফালকে সম্মান দিতে চেয়েছিল ভারত সরকার । কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি । কারণ সেই একটাই তিনি বাইরে আসবেন না।

সুচিত্রা সেনকে দিয়ে অ্যাড করিয়েছিল লাক্স।

সিনেমা জগতে বিরাট সাফল্য তাঁর বিবাহিত জীবনকে তছনছ করে দিয়েছিল। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির চিত্রনাট্যে যা ছিল ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর সঙ্গে সেগুলি ঘটেছিল। এই ছবির শ্যুটিংয়ে একদিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝগড়ার দৃশ্য ছিল। সেদিন সকালেই স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় তিনি তাঁর জামা ছিঁড়ে দিয়েছিলেন। শ্যুটিংয়ে একই দৃশ্য রিপিট করেছিলেন সুচিত্রা সেন। পরিচালক তাঁকে সেটা করার সম্মতি দিয়েছিলেন।


সুচিত্রা সেনের শেষ হিন্দি ছবি ছিল ‘আন্ধি’। কিন্তু ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার । কারণ এই ছবিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেন । পরে জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর ছবিটি ১৯৭৭ সালে রিলিজ করে । তবে সুচিত্রা সেনের সিগারট খাওয়া এবং মদ খাওয়ার দৃশ্য বাদ দিয়েছিলেন পরিচালক গুলজার।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন
১৯৭৮ সালে সিনেমা থেকে অবসর নেওয়ার পর আর কোন দিন টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় যাননি তিনি।

জন জীবন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার পর একমাত্র বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন যেতেন তিনি। বাড়িতে বাগান, পুজো এবং সন্ধ্যায় আকাশ দেখতে ভালোবাসতেন তিনি।

একাধিক পরিচালক তাঁর কাছে কাজের প্রস্তাব নিয়ে যেতেন । কিন্তু উত্তম কুমারের প্রয়াণের পর তিনি বলেছিলেন , আমি আর কার সঙ্গে কাজ করব ?

মা সারদার ভূমিকায় অভিনয় করা ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছা। কিন্তু তা আর পূরণ হয়নি ।

মৃত্যুর পর গান স্যলুট দিয়ে বিদায় জানানো হয় সুচিত্রা সেনকে।
সুচিত্রা সেন সম্পর্কে অজানা কথা (some unknown fact about Suchitra Sen), জানলে অবাক হবেন

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.