তুমি বন্ধু কালা পাখি
আমি যেন কি ?
বসন্ত কালে তোমায়
বলতে পারিনি।
সাদা সাদা কালা কালা
রং জমেছে সাদা কালা
হইছি আমি মন পাগলা
বসন্ত কালে...
ইউটিউব বা ফেসবুকের দৌলতে এপার বাংলায় দারুণ জনপ্রিয় চঞ্চল চৌধুরী বা মোশাররফ করিমের মতো বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। আর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাইছেন কলকাতার পরিচালকরা। গত বছর মোশাররফ করিম অভিনয় করেছিলেন ব্রাত্য বসুর ‘ডিকসিনারি’ ছবিতে। দশ বছর আগে চঞ্চল চৌধুরীকে আমরা দেখেছিলাম গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’-এ। কিন্তু সেটি ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনা ছিল। তারপর আর কাউকে তেমন একটা দেখা যায়নি। ইদানিং পরিস্থিতি বদলেছে । সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’ ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে। এদেশের মিডিয়াতে নিয়ম করে বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে খবর লেখা হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা জগতের প্রতি কতটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে এদেশে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসছেন বা যাচ্ছেন, পরস্পরের ছবিতে কাজ করছেন । সবই ঠিক আছে কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা ভারতের হলে সরাসরি মুক্তি পেয়েছে, এমনটা হয়নি । একটা ‘হাওয়া’ এসে দীর্ঘ দিনের সেই জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে দিল। ঠিকই ধরেছেন । ‘হাওয়া’ (HAWA Movie Bangladesh) সিনেমার কথা বলছি । বাংলাদেশের সিনেমাহলে রেকর্ড ব্যবসা করে ভারতের সীমিত হলে রিলিজ হয়েছিল চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘হাওয়া’ (HAWA Movie Bangladesh)। কিন্তু যত নাম হল , তত দাম পেল কই ? মানে ‘হাওয়া’ ঝড় হতে পারল না। কেন এমনটা হল ?
গত বছর ২৯ জুলাই বাংলাদেশের হলে রিলিজ হয় ‘হাওয়া’। দর্শকদের ভালো রেসপন্স পাওয়ার পর ১৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে মুক্তি পায়। পরে ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতে ছবিটি রিলিজ করে । সব জায়গাতেই ভালো সাড়া মিলেছে। কলকাতায় বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখানো হয়েছিল। ছবিটি দেখতে নন্দনে বিরাট লাইন পড়ে। একই ছবি দেখা যায় কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এরপরই ভারতে ‘হাওয়া’ ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নেয় রিলায়েন্স ইন্টারটেইমেন্ট। ১৬ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটির আগে পশ্চিমবঙ্গে ‘হাওয়া’ ৩৪টি হলে রিলিজ হয় । ৬ জানুয়ারী, ২০২৩-এ দিল্লি, হরিয়ানা , মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশে মুক্তি পেয়েছে।
ভারতে কত ব্যবসা করল ‘হাওয়া’ ?
বাংলাদেশে এই সিনেমা টানা ১০০ দিন চলেছে। আয় করেছে ১৬ কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য দেশ মিলিয়ে অংকটা আরও একটু বেশি হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতে কেমন সাড়া মিলল ? এই প্রশ্নে ডিস্ট্রিবিউটারদের মুখ বেজার। যেমনটা ভাবা হয়েছিল , আদৌ তেমনটা হয়নি । নন্দনে ‘হাওয়া’ দেখতে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেলেও অন্য হলে তা হয়নি। পুরো হিসেব না পাওয়া গেলেও জানা গিয়েছে, প্রথম সপ্তাহে মাত্র ৩৫ হাজার টাকার ব্যবসা করতে পেরেছে ‘হাওয়া’। প্রথম সপ্তাহে যদি এই হাল হয় , তাহলে পরের সপ্তাহগুলিতে কি অবস্থা দাঁড়িয়েছিল বুঝতে ফিল্ম বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কেন এমনটা হল ? প্রথম কারণ অবশ্যই দেব-মিঠুনের ‘প্রজাপতি’। বড়দিনের ছুটিতে কয়েকটি বাংলা সিনেমা একই সঙ্গে রিলিজ হয় । যার মধ্যে ‘প্রজাপতি’ দারুন হিট। যার দাপটে অন্য সিনেমা বেশ ফিকে। আরো একটা বড় কারণ, নন্দনে যে সব দর্শক সিনেমা দেখতে যান শেওড়াফুলি বা বারুইপুরের হলে সেই দর্শক থাকেন না। সেখানে ক’জন চঞ্চল চৌধুরীকে চেনেন বা বাংলাদেশের ছবি সম্পর্কে খবরাখবর রাখেন সন্দেহ। সংখ্যাটা হয়তো খুব কম । তাই কলকাতার মাল্টিপ্লেক্স বা নন্দন ছাড়া বসুশ্রীতেও ‘হাওয়া’ ব্যবসা করতে পারেনি। ইউটিউবে দেখা চঞ্চল চৌধুরী ছাড়া আর কোন পরিচিত মুখ নেই। যে সব দর্শক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নিয়ে খবর রাখেন তাঁরা ছাড়া ‘হাওয়া’ অন্যদের টানতে পারেনি। তবে ভালো সিনেমা যারা দেখতে চান, তাঁরা অবশ্যই ‘হাওয়া’ দেখেছেন। ‘হাওয়া’ মুখ থুবড়ে পরার পর ভারতের হলে বাংলাদেশের সিনেমার ভবিষ্যৎ কি ? এরপর ডিস্ট্রিবিউটাররা আর আগ্রহ দেখাবেন ? ওদেশের এখানকার সিনেমা রিলিজ হলেও বাংলাদেশের সিনেমা হলে দেখার সৌভাগ্য এপার বাংলার মানুষের হয় না। ভারতের সব চ্যানেল বাংলাদেশে চলে, কিন্তু ওদেশের চ্যানেল এখানে চলতে দেওয়া হয় না। এই নিয়ে বৈষম্যের বিস্তর অভিযোগ আছে। ‘হাওয়া’ সিনেমার হাত ধরে রাস্তা খুলে ছিল। কিন্তু ব্যবসা করতে না পারায় এখন বাংলাদেশের সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখে দিতে শুরু করেছে ।
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box