What is the present status of Nachiketa? : জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে ! তবুও লড়ছেন নচিকেতা চক্রবর্তী
শুক্রবার বীরভূমের রামপুরহাটে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু কলকাতার বাড়ি থেকে রওনা হতেই পারলেন না। গাড়ি করে ৩৫০ কিলোমিটার যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। কারণ শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না। শেষে ভিডিও বার্তায় নিজের কথা জানালেন শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। ভিডিওটি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে , শরীর ভেঙে গিয়েছে। গুরুতর অসুস্থ তিনি। ভালো করে কথা বলতে পারছেন না। এই বছর যেতে না পারলেও আগামী বছর ঠিক রামপুরহাট উৎসব মাতাবেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু দিনে দিনে লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। ক্রমশ জটিল এক রোগ শরীরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। তবু লড়ছেন শিল্পী। সারাজীবন গানের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন। সেই লড়াই ঘুণ ধরা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, কখনো ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে, আবার কখনো রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। বুকের ভিতর ঘা দেওয়া সেইসব গানের কথা চোয়াল শক্ত করেছে ৯০ দশকের যুব সমাজের। ভাবতে শিখিয়েছে। প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে। সলিল চৌধুরী এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের যুগের অবসানের পর বাংলা গানের দিক কোন দিকে যাবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছিল । তখনই বাংলা গানের ধারা সম্পূর্ণ বদলে দিলেন নবীন শিল্পী সুমন চট্টোপাধ্যায়। বাঙালি শ্রোতা চমকে উঠল। গানের ভাষায় কবিতা নেই, ফুল-লতা-পাতা নেই, ন্যাকা ন্যাকা প্রেম নেই। বদলে শুধুই জীবনের কথা । যেন গদ্যমুখি গান। গানের কথায় শুধুই বিদ্রোহ। ষাট বা সত্তরের দশকে বিদেশের মাটিতে গান নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সুমন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে এসে পড়ল বাংলায়। বাম শাসিত বাংলায় তখন এই গান আলোড়ন তৈরি করল । আর সেই আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক নচিকেতা চক্রবর্তী।
‘আমি কোন বাউল হব, এটাই আমার অ্যাম্বিসন’
বন্ধুরা যখন জীবনের পথ বেছে নিচ্ছিল, তখন যুবক নচিকেতা ঠিক করেন তিনি গায়ক হবেন। নিজের লেখা গান নিজেই গাইবেন। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবের মাঝে বিস্তর ফারাক। অনেক লড়াই। বড় বড় চুল, গাল ভর্তি দাড়ি আর চোখে আগুন মেশানো স্বপ্ন নিয়ে লড়াই শুরু করেন । কবির সুমন তখন নাম করে ফেলেছেন। মৌলিক গান গেয়ে নিজস্ব জগত তৈরি করেছেন । সেই পথ অনুসরণ করেই এগতে লাগলেন নচিকেতা । কিন্তু সুযোগ পাওয়া মুশকিল। নিজের লেখা গান ও সুর রিজেক্ট করে দিত বেশিরভাগ মিউজিক কোম্পানি। কারণ, তাঁদের মনে হত এই গান কেউ শুনবে না। তবু নিজের পথ থেকে সরে যাননি । এইভাবে অনেক সংঘর্ষের পর ১৯৯৩ সালে প্রথম অ্যালবাম রিলিজ হল , ‘এই বেশ ভালো আছি’। এক নবীন শিল্পীর গাওয়া গান যেন চমকে দিল সমাজকে । অ্যালবাম রাতারাতি হিট। প্রতিটি গান আজও হিট।
Nachiketa Chakraborty: early life, first album
১৯৬৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম। যদিও তিনি বংশসূত্রে পূর্ববঙ্গের মানুষ। তাঁর দাদু ললিত মোহন চক্রবর্তী দেশভাগের আগে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন। এখনও বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠি জেলার চেচরীপুর গ্রামে পৈতৃক ভিটে আছে। ছোট থেকেই সলিল চৌধুরীর গানের ভক্ত নচিকেতা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজে পড়ার সময় ক্লাসের বেঞ্চ বাজিয়ে গান গাইতেন। তখন থেকেই গান লিখতেন। ছাত্র বয়স থেকেই ভালো গানের জন্য বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।‘আমি কোন বাউল হব, এটাই আমার অ্যাম্বিসন’
বন্ধুরা যখন জীবনের পথ বেছে নিচ্ছিল, তখন যুবক নচিকেতা ঠিক করেন তিনি গায়ক হবেন। নিজের লেখা গান নিজেই গাইবেন। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবের মাঝে বিস্তর ফারাক। অনেক লড়াই। বড় বড় চুল, গাল ভর্তি দাড়ি আর চোখে আগুন মেশানো স্বপ্ন নিয়ে লড়াই শুরু করেন । কবির সুমন তখন নাম করে ফেলেছেন। মৌলিক গান গেয়ে নিজস্ব জগত তৈরি করেছেন । সেই পথ অনুসরণ করেই এগতে লাগলেন নচিকেতা । কিন্তু সুযোগ পাওয়া মুশকিল। নিজের লেখা গান ও সুর রিজেক্ট করে দিত বেশিরভাগ মিউজিক কোম্পানি। কারণ, তাঁদের মনে হত এই গান কেউ শুনবে না। তবু নিজের পথ থেকে সরে যাননি । এইভাবে অনেক সংঘর্ষের পর ১৯৯৩ সালে প্রথম অ্যালবাম রিলিজ হল , ‘এই বেশ ভালো আছি’। এক নবীন শিল্পীর গাওয়া গান যেন চমকে দিল সমাজকে । অ্যালবাম রাতারাতি হিট। প্রতিটি গান আজও হিট।
ক্যাসেটের কভারে ঢিলেঢালা জামা আর স্ক্রিন টাইট জিন্স পড়া নচিকেতার ছবি। আর বুকে একরাশ বারুদ নিয়ে গাইছেন-এই বেশ ভালো আছি! খেটে খাওয়া, চিরবঞ্চিত মানুষ নিজের ভাষা পেল। যাঁদের কাছে ‘খুদ্ধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ তাঁরা মেরুদণ্ডে জোর পেলেন। বেকার যুবকরা পেলেন ভাষা। সভ্য সমাজের ফাঁপা বেলুন ফাটিয়ে তৈরি হল নতুন যুগ -নচিকেতা যুগ । যিনি নির্দ্বিধায় গানে বলতে পারেন- ‘মন্ত্রীরা সব হারামজাদা’। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । শুধুই এগিয়ে চলা। একক গানের পাশাপাশি যৌথ অ্যালবামে গেয়েছেন তিনি। সিনেমাতেও সুর দিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমায় প্রথম সুর দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে ‘কুয়াশা যখন’, ‘ খেলাঘর’, ‘কাটাকুটি’ সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় সুর দিয়েছেন।
অনেকে সমালোচক বলেন , নচিকেতা গিমিক করেন । অতিনাটকীয়তাকে দ্রুত জনপ্রিয়তার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যঙ্গ করেন । গানের মধ্যে গালিগালাজ ব্যবহার করে যুব সমাজকে দিকভ্রষ্ট করেন । অভিযোগ অনেক। বিতর্ক আছে, বিতর্ক থাকবে। কিন্তু নচিকেতা তাঁর নিজের আসনে চির বিরাজ করবেন । যেটা তাঁর নিজস্ব । আজ অসুস্থ তিনি। শরীর আর সঙ্গ দেয় না। তাই বলে বিদ্রোহের ভাষা থেমে থাকতে পারে না। আগুন জ্বলবে ।
প্রায় ৪৫০টির বেশি গান তিনি গেয়েছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ তাঁর নিজস্ব । এছাড়া ৩০০টির বেশি গান এখনও মুক্তি পায়নি। যা তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে দিয়েছেন।
অনেকে সমালোচক বলেন , নচিকেতা গিমিক করেন । অতিনাটকীয়তাকে দ্রুত জনপ্রিয়তার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যঙ্গ করেন । গানের মধ্যে গালিগালাজ ব্যবহার করে যুব সমাজকে দিকভ্রষ্ট করেন । অভিযোগ অনেক। বিতর্ক আছে, বিতর্ক থাকবে। কিন্তু নচিকেতা তাঁর নিজের আসনে চির বিরাজ করবেন । যেটা তাঁর নিজস্ব । আজ অসুস্থ তিনি। শরীর আর সঙ্গ দেয় না। তাই বলে বিদ্রোহের ভাষা থেমে থাকতে পারে না। আগুন জ্বলবে ।
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box