বাংলাদেশ কী ক্রমশ পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে ? সব দেখে শুনে তাই তো মনে হচ্ছে। ভারতের সাহায্য ছাড়া যাদের একদিনও চলে না। তাদের একটি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি নিয়ে এত টালবাহানা কিসের ? কোথায় জটিলতা ? এই তো ক’দিন আগে এ রাজ্য সহ দেশের বেশ কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজ হয় বাংলাদেশী ছবি ‘হাওয়া’। নন্দনে তো সব ক’টি শো হাউসফুল ছিল। অন্যত্র তেমন চলেনি। সেটা আলাদা প্রসঙ্গ। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ রিলিজ হওয়ার পর রীতিমতো ঝড় তুলেছে। ইতিমধ্যেই ‘বাহুবলী’র হাজার কোটির বেশি আয়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ইতিহাস সৃষ্টির পথে ‘পাঠান’। মজার ব্যাপার হল, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ‘পাঠান’ মুক্তি পায়নি। পাকিস্তান না হয় শত্রু দেশ। সেখানে ভারতীয় সিনেমায় নিষেধাজ্ঞা আছে। বাংলাদেশ তো মিত্র দেশ। সব থেকে বড় কথা বাংলাদেশের সিনেমা ভক্তরা, যাঁরা বলিউডের ফ্যান। তাঁরা ‘পাঠান’ দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। সোশ্যাল সাইটে বাংলাদেশের এক ভক্ত জানতে চেয়েছিলেন, কবে আমরা শাহরুখ খানকে দেখতে পাব ? উত্তর দিয়েছিলেন কিংখান। তিনি জানান, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ‘পাঠান’ রিলিজ হবে। শাহরুখের উত্তর পেয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে যায় ঢাকায়। সবই ঠিক আছে। কিন্তু তবুও ‘পাঠান’ রিলিজ নিয়ে জটিলতা কাটছে না।
Pathan: জটিলতা কোথায় ?
উত্তর পেতে গেলে আমাদের ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে। ১৯৪৮ সালে দেশ ভাগের পর হিন্দি ছবি বিদেশী সিনেমা তকমা দিয়ে ব্যান করা হয়। মজার ব্যাপার হল, পাকিস্তানে তৈরি উর্দু ভাষার সিনেমা বাংলাদেশে রিলিজ হতো। তখন বিদেশী সিনেমা নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না। ভালো কথা। ভারতের সাহায্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের হাত থেকে ছাড়া পেল, তখন সবাই ভেবে ছিল এবার বলিউডের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু হল বিপরীত। ভারত বন্ধু মুজিবর কিন্তু হিন্দি সিনেমাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিরোধী তকমা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখলেন। অথচ বাংলাদেশকে তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ ঘোষণা করেছিলেন। আসল ব্যাপার হল, হিন্দি সিনেমার কোয়ালিটির সামনে বাংলাদেশের নিম্নমানের সিনেমা দাঁড়াতে পারবে না, সেটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। আর হিন্দি সিনেমাতে ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়, যা ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না। ভোট বড় বালাই। মুজিবর কন্যার কাছেও সেই বাধ্যবাধকতা আছে। তাই তো বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচার হলেও তিনি চুপ থাকেন। ‘পাঠান’এর ক্রেজ দেখে সেদেশের এক পরিবেশক সংস্থা সিনেমাটি আমদানির আবেদন করে। বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মেহমুদ জানান, শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা নিয়ে আসার ব্যাপারে তাঁর কোন আপত্তি নেই। বিরাট বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনেক তর্ক বিতর্ক, ঘাম ঝড়ানোর পর ঠিক হয়, বছরে ১০ টি হিন্দি সিনেমা আনা যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত শুনে হায় হায় করে উঠেছেন সেদেশের কয়েক জন শিল্পী ।
Pathan: যাঁদের মূল আপত্তি
বাংলাদেশের ডিপজল নামের এক অভিনেতা হিন্দি সিনেমাকে অশ্লীল তকমা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, “বলিউডের ছবিতে যে ধরণের নাচ গান দেখানো হয়, তা বাংলাদেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। বাংলাদেশের সিনেমা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সেই সময় হিন্দি সিনেমা ঢুকলে সব শেষ হয়ে যাবে”। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ছবি যদি অতো সংস্কৃতির ধারক বাহক হয়, তাহলে ডিপজলের ভয় কোথায় ? হিন্দি সিনেমা তো সাউথের হলে রিলিজ করে। তামিল বা তেলেগু ছবির তাতে কোন ক্ষতি হয়েছে ? সাউথ না হয় বাদ দিন, হিন্দি সিনেমা বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের হলেও মুক্তি পায়। তাই বলে ভোজপুরী ইন্ডাস্ট্রি বা বাংলা সিনেমা শেষ হয়ে গিয়েছে ? আসল বিষয় হল, গুণমান বা কোয়ালিটি। সেটা ভালো থাকলে দর্শক দেখতে বাধ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমা কেমন মানের হয়, তা নিয়ে কোন কথা না বলাই ভালো। শ্রীলঙ্কার মতো ছোট দেশে ভালো মানের ছবি হয়, বাংলাদেশ তো তার থেকে বড়। আর যিনি অশ্লীল বলেছেন, সেই ডিপজল কী ধরণের ছবিতে অভিনয় করতেন তা ইউটিউবের কল্যাণে এখন দেখতে পাওয়া যায়। দেখুন কতটা অশ্লীল -
বাংলাদেশের বর্ষীয়ান পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আবার বলেছেন, “আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য গুলি খেয়ে প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীর কোথায় এই নজির নেই। মাথা উঁচু করে আমরা বাংলায় কথা বলি। সেখানে কেন হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাবে ? আমাদের ওই কালচারের প্রয়োজন নেই”। তার মানে কি বলতে চাইছেন এই পরিচালক ? ভারতের কালচার খারাপ ? শুধুমাত্র বাংলাদেশ উচ্চ সংস্কৃতির ধারক-বাহক? তাই যদি হয়, যখন বাংলাদেশে মন্দির ভাঙা হয়, সংখ্যালঘুদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, বাড়ির মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়, তখন কেন এই সংস্কৃতির ধারকরা চুপ করে থাকেন ? প্রশ্নের উত্তর কি মিলবে কোনদিন ?
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box