Bengali movie forgotten actor Soumitra Banerjee: মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই নিদারুণ মৃত্যু, কীভাবে শেষ হয়ে গেলেন সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলা সিনেমার বিস্মৃত প্রায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তালিকা তৈরি করা হয়, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Soumitra Banerjee) নাম সেখানে থাকবে। পর্দার ভিলেন হয়ে দর্শকদের কাছে চিরদিন ঘৃণ্য হয়ে থেকে গিয়েছেন। এতটাই দক্ষ অভিনেতা ছিলেন তিনি। অনেকেই তাঁকে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে নানু মনে করেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন সম্পর্ক নেই। সিনেমাতে হিরো হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষে হয়ে গেলেন খতরনাক ভিলেন। বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের ভূমিকায় তাঁকে খুব ভালো মানত। আর সেই চরিত্রে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। খুব ছোট থেকেই প্রতিভাবান ছিলেন। ১৯৬৪ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন ‘শুভা ও দেবতার গ্রাস’ ছবিতে।

হুগলীর পান্ডুয়ার এক বিখ্যাত জমিদার বাড়ির ছেলে ছিলেন সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় (Soumitra Banerjee) । জন্ম হয় ১৯৫৪ সালে। পড়াশোনায় তেমন মন না বসেনি। বরং বিনোদন দুনিয়া তাঁকে বেশি আকর্ষণ করত। মাত্র আট বছর বয়সে সিনেমায় প্রথম অভিনয়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন ফ্যাংশনে গান গাইতেন। হোটেলে গান গেয়েও রোজগার করেছেন। তাঁর গানের গলা ছিল খুব ভালো। সঙ্গে টালিগঞ্জ পাড়ায় অভিনয়ের ইচ্ছা নিয়ে যাতায়াত করতেন। এইভাবেই একদিন নজরে পড়েন পরিচালক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ১৯৮২ সালে ‘ত্রয়ী’ ছবিতে নায়ক হিসেবে সুযোগ পান। সঙ্গে ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) ও দেবশ্রী রায় (Debshree Roy)। সেই বছরের সবথেকে বড় মিউজিক্যাল হিট ছিল ‘ত্রয়ী’। রাহুল দেব বর্মণের সুরে ছবির গান বিরাট হিট করে।

তারপর হিরো হিসেবে বেশ কয়েকটি ছবি করেন। তবে ১৯৮৪ সালে ‘পারাবত প্রিয়া’ ছবিতে ভিলেন হিসেবে প্রথম অভিনয়। খলনায়ক সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে দর্শক সবথেকে বেশি গ্রহণ করল। এরপর ১৯৮৭ তে ‘গুরুদক্ষিণা’তে তাঁর অভিনয় সবথেকে বেশি নজর কাড়ে। বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে হিসেবে তিনি একপ্রকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন। ১৯৮৮ সালে তরুণ মজুমদারের ‘আগমন’ ছবিতেও সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে একই ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। ৮০ এবং ৯০-এর দশকে অ্যাকশন ধর্মী পারিবারিক ছবি সবথেকে বেশি হিট হতো। সেই সব সিনেমায় হিরো থাকতেন তাপস পাল, প্রসেনজিৎ বা চিরঞ্জিত। সিনেমাতে হিরোতে প্রতিষ্ঠিত করতে ভিলেনের অনেক ভূমিকা থাকে। খলনায়ক যত বেশি ভয়ঙ্কর হতেন, সিনেমা তত হিট করত। দর্শকের হাততালিতে হল ফেটে পড়ত। আর সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Soumitra Banerjee) পর্দায় দেখলে দর্শক রেগে যেত। তাঁর সবথেকে বেশি হিট ডাইলগ ছিল ‘নবাব’ ছবিতে ‘মালটাকে গাড়িতে তোল’। তখন এই সংলাপ মুখে মুখে ফিরত।

এত প্রতিভাবান অভিনেতার মৃত্যু হয় অকালে। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে। ১৯৯৯ সালে প্রভাত রায়ের ‘খেলাঘর’ ছিল তাঁর অভিনীত শেষ সিনেমা। তখন গুরুতর অসুস্থ তিনি। অত্যাধিক মদের নেশা শরীরে একাধিক রোগ ডেকে এনেছিল। ১৯৯৬ সালের পর থেকে আর তেমন অভিনয় করতে পারতেন না। শরীর সঙ্গ দিত না। পরিবার থেকেও বিতাড়িত হয়েছিলেন। লিভ ইন করতেন অভিনেত্রী রীতা কয়রালের সঙ্গে। ২০০০ সালের ৮ জানুয়ারী তিনি মারা যান। সরোদ শিল্পী অভিনন্দন মৈত্র ছিলেন তাঁর সবথেকে কাছের বন্ধু। ছোট থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছিলেন। সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন সংগ্রাম, দেবতার গ্রাস সহ বেশ কিছু ছবিতে মিউজিক দিয়েছিলেন। বন্ধুর মৃত্যুর পর অভিনন্দন মৈত্র বলেছিলেন, সৌমিত্রর মতো প্রতিভাবান অভিনেতা খুব কম হয়। দুঃখের বিষয় হল, বাংলা সিনেমার জগৎ তাঁকে ঠিক করে ব্যবহার করল না।

Soumitra Banerjee filmography


১৯৮২- ত্রয়ী

১৯৮৪- পারাবত প্রিয়া

১৯৮৬- আশীর্বাদ

১৯৮৭- গুরুদক্ষিণা

১৯৮৭- অমর সঙ্গী

১৯৮৮-আগমন

১৯৮৯- মঙ্গলদীপ

১৯৮৯- আশা ও ভালোবাসা

১৯৮৯- অমর প্রেম

১৯৯০- বদনাম

১৯৯২- ইন্দ্রজিৎ

১৯৯২- অনুতাপ

১৯৯৪- ফিরিয়ে দাও

১৯৯৬- ভয়

১৯৯৯- খেলাঘর

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.