Pather Panchali fame Durga: ‘পথের পাঁচালী’-এর দুর্গা এখন কেমন আছেন ? কোথায় থাকেন ?

‘পথের পাঁচালী’ (Pather Panchali) । বিশ্বের দরবারে ভারত তথা বাংলা সিনেমার অন্যতম প্রতিনিধি। কিছু দিন আগেই সত্যজিৎ রায়ের এই কাল্ট ছবিকে সর্বকালীন সেরা ভারতীয় সিনেমার খেতাপ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাৎ করেছিলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। অথচ এই সিনেমা তৈরি করতে তাঁকে মায়ের গয়না পর্যন্ত বন্দক রাখতে হয়ে ছিল। টাকার অভাবে বারবার আটকে গিয়েছিল ছবি তৈরি। শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাহায্যে তৈরি হয় ‘পথের পাঁচালী’ (Pather Panchali)। এই সিনেমা তৈরির গল্প নিয়ে আস্ত একটি সিনেমা বানিয়েছেন পরিচালক অনীক দত্ত। নাম ‘অপরাজিত’। টাকা যেমন পথের পাঁচালী তৈরির পথে অন্তরায় ছিল, তেমনই অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এব্যাপারে সত্যজিৎ রায়কে সাহায্য করেছিলেন তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাসকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে গেলে চাই বিশ্বাসযোগ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী। অনেক বিজ্ঞাপন দিয়েও পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে কোন বাচ্চা ছেলে পাওয়া যায়নি। শেষে বাড়ির জানলা দিয়ে ছোট্ট অপুকে আবিষ্কার করেন বিজয়া রায়। সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে খেলতে দেখেছিলেন তিনি। আর দিদি দুর্গার চরিত্রের জন্য থিয়েটার থেকে বেছেছিলেন উমা দাশগুপ্তকে (Uma Dasgupta)। রীতিমতো অডিশন দিয়ে তিনি সুযোগ পান।

কেমন আছেন উমা দাশগুপ্ত ?

সর্বজয়া চরিত্রের জন্য বন্ধুর স্ত্রী থিয়েটার অভিনেত্রী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছে ছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি চেয়েছিলেন মেয়ে দুর্গা যেন মায়ের মুখের আদলের হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উমা দাশগুপ্তকে পান। কিন্তু তাঁর বাবা ভীষণ ভাবে সিনেমার বিরোধী ছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, সিনেমাতে ভালো বাড়ির মেয়েরা কাজ করেন না। শেষে সত্যজিৎ রায়ের একান্ত অনুরোধে রাজি হন। সুকুমার রায়ের পুত্রের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেননি। রক্ষণশীল পরিবার একটি শর্তে রাজি হয়ে ছিলেন, ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাঁদের মেয়ে উমা কোন পারিশ্রমিক নেবেন না। বাস্তবে সেটাই হয়ে ছিল। ‘পথের পাঁচালী’ তে (Pather Panchali) কাজ করে একটি টাকাও নেননি উমা দাশগুপ্ত। তাই পথের পাঁচালী করার পর আর একটিও সিনেমা তিনি করেননি। বাবা সম্মতি দেননি।

এখন বয়সের ভারে জীর্ণ উমা দেবী সম্পূর্ণ গৃহবন্দি। দক্ষিণ কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। খুব একটা বাইরে বের হন না। মিডিয়ার কাছেও মুখ খোলেন না। তবে কিছুদিন আগে অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’ দেখতে গিয়েছিলেন। দেখে খুব অসন্তুষ্ট হন। কারণ সিনেমাতে অনেক তথ্য বিকৃত করা হয়েছে, দাবি তাঁর। সিনেমাতে দেখেনো হয়েছে, উমা তাঁর মায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে যান। কিন্তু তাঁর আরবান লুক দেখে প্রথমে পচ্ছন্দ হয়নি সত্যজিৎ রায়ের। পরে বিজয়া রায় একটি শাড়ি পড়িয়ে তাঁর সামনে দাঁড় করায়। তখন দুর্গা চরিত্রের জন্য উমাকে পচ্ছন্দ করেন তিনি। উমা দাশগুপ্তের দাবি, এমনটা কিছুই হয়নি। তখন সত্যজিৎ রায় স্কুলে স্কুলে দুর্গা চরিত্রের জন্য মেয়ে খুঁজছিলেন। উমা দাশগুপ্ত স্কুল-থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বন্ধু ছিলেন লেখক আশিস বর্মণ। তিনি থিয়েটারে উমা দাশগুপ্তকে দেখে পচ্ছন্দ করেন। সত্যজিৎ রায়ের কাছে খবর দেন। একদিন পুরো টিম নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান সত্যজিৎ রায়। কিন্তু উমা দেবীর বাবার প্রবল আপত্তি ছিল। সিনেমাতে কিছুতেই মেয়েকে কাজ করতে দেবেন না। শেষে সত্যজিৎ রায়ের কথায় রাজি হন। তারপর সবটা ইতিহাস। মাঝে মাঝে উমা দেবীর মৃত্যুর খবর রটানো হয়। যা নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ উমা দাশগুপ্ত। বিয়ের পর উমা সেন। তিনি সুস্থ আছেন। ভালো আছেন। জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে শ্রীময়ী সেন।

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.