Mahua Roychowdhury son Tamal Chakraborty: মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর কী হল ছেলে তমালের ? কেমন দেখতে হয়েছে তাঁকে ?

১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। খাতায় কলমে শরৎ এসে গেলেও কলকাতার আকাশ থেকে তখনও বর্ষা বিদায় নেয়নি। সেদিন সারাদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি। এত বৃষ্টি দেখে চিন্তার ভাঁজ পড়ে কলকাতাবাসীর কপালে। কারণ সেদিন ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। কলকাতায় এসেছেন পেলে। খেলবেন মোহন বাগানের সঙ্গে। আর সেদিন প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাংলা ছবির ‘লক্ষ্মী’ মহুয়া রায়চৌধুরী (Mahua Roychowdhury) । বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সেদিন খেলা হয়েছিল। সারা শহর জুড়ে শুধু ‘গোল’ আওয়াজ। তারই মাঝে একটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম দিলেন মহুয়া। ফুটবল জ্বরের মধ্যে জন্ম। তাই ভালোবেসে ছেলের ডাক নাম দিলেন ‘গোলা’। আর ভালো নাম তমাল। তমাল চক্রবর্তী (Mahua Roychowdhury son)

১৯৭৬ সালের ২ মে অভিনেতা তিলক চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন মহুয়া। তিলক শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথমে অভিনয় করতেন। তারপর কিশোর কণ্ঠি হয়ে প্রচুর স্টেজ শো করতেন। একসঙ্গে প্রচুর ফ্যাংশন করতে করতে প্রেমের শুরু। মহুয়া নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরেও প্রথম যৌবনের প্রেম ভোলেননি। বিয়ে করেছিলেন তিলককে। তখন তিলক চক্রবর্তী ব্যাংকে চাকরি করতেন। বিয়ের পর জীবন কঠিন হয়ে উঠল মহুয়ার। প্রচণ্ড সন্দেহ করতেন স্বামী। আর নিয়ে নিত্য অশান্তি। খুব ছোট থেকেই গোলা বাবা-মায়ের মধ্যে তীব্র অশান্তি দেখেছেন। ঠিক কারণে এত ঝগড়া তা তিনি বুঝতে পারতেন না। শুধু, ভাবতেন, এই অশান্তি কবে শেষ হবে। শেষ একদিন হল। আর যখন হল তখন সব শেষ।

১৯৮৫ সালের ২২ জুলাইয়ের মধ্য রাতে নিজের বাড়িতে গায়ে আগুন লাগে মহুয়ার। দেহের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে ফাইট করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানেন। মারা যাওয়ার আগে প্রিয় বান্ধবী রত্না ঘোষালকে বলে গিয়েছিলেন, ‘গোলা রইল। দেখিস’। আর কিছু বলা হয়নি। চোখের সামনে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মাকে মারা যেতে দেখেন গোলা। তখন থেকেই বোধ হয় মনের দিক থেকে শক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জানতেন, জীবনে এবার একা বড় হতে হবে। লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। আর কোনদিন জন্মদিন পালন করেননি তমাল। তাঁর জন্মদিনে ঘটনাচক্রে মায়েরও জন্মদিন। ২৪ সেপ্টেম্বর তাই মাকে স্মরণ করেন তিনি। মায়ের মৃত্যুদিন কখনো পালন করেন না।

মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর বেশ কিছু তাঁর অভিনীত ছবি মুক্তি পায়। যেমন, অনুরাগের ছোঁয়া, আশীর্বাদ, প্রেম ও পাপ, অভিমান, আবির, কেনারাম বেচারাম। তাঁর অকাল মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি। আর থেকে গিয়েছিল তমাল ও তিলকের জীবন। মহুয়ার মৃত্যুর পর আর সিনেমা জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি দুজনে। একপ্রকার হারিয়ে যান। চাকরি করে খুব কষ্ট নিয়েই ছেলেকে মানুষ করেন তিলক চক্রবর্তী। তিনি আর বিয়ে করেননি।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর বিনোদন জগতে ফিরে আসেন তমাল। তবে অভিনেতা হিসেবে নয়। মিউজিক আয়োজক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিয়ে করেছেন। একটি মেয়েও আছে। প্রথম কাজ বাংলা ব্যান্ড ‘শহর’-এর অনিন্দ্য বসুর গাওয়া ‘তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্ত’। ‘এ তুমি কেমন তুমি’, ‘আকরিক’, বাংলাদেশের সিনেমা ‘রাত জাগা ফুল’ ইত্যাদি নানা সিনেমায় কোথাও গায়ক, কোথাও সঙ্গীত পরিচালক হয়ে কাজ করেছেন তমাল। বাবা তিলক চক্রবর্তী অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। মায়ের যন্ত্রণাময় অভিশপ্ত জীবনের ইতিহাস ভুলে নিজের সঙ্গীতময় জীবন গড়ে তুলেছেন তমাল চক্রবর্তী। মহুয়া রায়চৌধুরীর ‘গোলা’(Mahua Roychowdhury son)

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.