Coromandel train accident: চারিদিকে কাটা হাত-পা, তিন মাসের শিশুটার আর খোঁজ পেলাম না, রেল দুর্ঘটনায় বরাত জোরে বাঁচা যাত্রীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
ইতিমধ্যেই শতাব্দীর সবথেকে বড় রেল দুর্ঘটনার তকমা পেয়ে গিয়েছে coromandel express accident। মৃত্যু প্রায় ৩০০। জখমের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনও কেউ আন্দাজ করতে পারছে না। সারি সারি শুধু সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহ। কারও মুখ বিকৃত, কারও হাত নেই তো কারও পা। রক্ত, আর রক্ত। চারিদিকে শুধু রক্তের ধারা বয়ে চলেছে। সেই রক্ততে পা দিয়েই উদ্ধারকাজ চলছে। ফলে রক্তের ছাপ সর্বত্র। আর এর মধ্যে যে বা যাঁরা বরাত জোরে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের মুখে শোনা গিয়েছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। জীবনে কোনও দিন এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে, তা তাঁরা কল্পনাও করেননি। সাধারণ তাঁদের জীবন। অতি সাধারণ। কাজের সন্ধানে বাড়ি, গ্রাম, রাজ্য ছেড়ে দূর রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়েছিল। কিছু করার নেই। এখানে তো কাজ নেই। কিছু রোজগারের আশায় ট্রেনে চেপে বসেছিলেন। প্রচণ্ড গরম। তার মধ্যে জেনারেল কামরায় গাদাগাদি ভীড়। সেই ভীড়ের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা সুকান্ত হালদার। অভিশপ্ত ট্রেন থেকে ফিরে আসা যাত্রী।
এরপর নিজেকে টানতে টানতে কোনও রকমে রেল লাইনের ধারে পাশের রাস্তায় ওঠেন সুকান্ত হালদার। সেখানে একটি গাড়ি বালাসোর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। বালাসোর থেকে কলকাতা আসার বাস পান। কিন্তু বাসে ফেরার টাকা ছিল না। দুর্ঘটনার কথা শুনে বাস চালক দয়া করে কলকাতা পৌঁছে দিয়েছেন। সারারাত বাসের মধ্যে দুচোখ এক হয়নি। বারবার ভেসে উঠছিল ট্রেনের ছবি। এত ভয়াবহ যেন সাক্ষাৎ যমপুরী। ভাবতে ভাবতে কখন ভোর হয়ে গেল খেয়াল করেননি। বাইরে তাকিয়ে দেখেন সূর্য উঠেছে। কলকাতার রাস্তায় ধীরে ধীরে চাঞ্চল্য ফিরছে। জীবন বোধহয় একেই বলে। দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর রক্তসন্ধ্যা পিছনে পড়ে রইল। জীবন এগিয়ে চলেছে। নতুন সূর্য উঠল। শুধু মনে আসছিল, সেই তিন মাসের ফুটফুটে বাচ্চাটার কথা। সে এই নতুন দিনের নতুন সূর্য দেখতে পেল তো ?
ভয়ঙ্কর ঝাঁকুনি আর শব্দ
সুকান্ত হালদারের কথায়, শালিমার থেকে স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল ট্রেন। শুকনো খাবার নিয়ে ট্রেনে ওঠা তাঁর চিরকালের অভ্যাস। চিড়ে, মুড়ি। শালিমার থেকে জল ভরে নিয়েছিলেন বোতলে। এত গরম খড়্গপুর পার হওয়ার আগেই তা শেষ হয়ে যায়। বালাসোরে ট্রেনটি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। তখন আবার জল ভরে নেন। সহ যাত্রীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বেশ সময় কেটে যাচ্ছিল। সঙ্গে চা-মুড়ি চলছিল। কামরায় একটি তিন বছরের বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছিল একটি পরিবার। তাদের সাথেও ভালো আলাপ হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চাটি এত মিষ্টি দেখতে। প্রায় তখন সাতটা বাজে। হঠাৎ ট্রেনের আলো নিভে এল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তীব্র ঝাঁকুনি আর শব্দ। সে যে কি বিরাট শব্দ। কান যেন ফেটে যাওয়ার জোগাড়। তারপর সব অন্ধকার।চারিদিকে শুধু লাশ
‘জ্ঞান যখন ফিরল। অনুভব করলাম মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা। নড়তে পারছি না। খেয়াল করলাম আমার উপর অনেক মানুষ। তাঁরা বেঁচে না মৃত কিছুই জানি না। কেউ নড়ছিল না। গায়ে জোড় এনে তাঁদের ঠেলে সরালাম। আবছা আলোয় দেখলাম চারিদিকে শুধুই দেহ। কারও হাত নেই, কারও মাথা। কারও আবার মুখ এমন বিকৃত যে চেনার উপায় নেই। কেউ সিট থেকে ঝুলছে, কেউ মেঝেয় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। রক্তের টাটকা গন্ধ নাকে এল। কোনও রকমে বাইরে বেরলাম। দেখলাম কামরাটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। হঠাৎ মনে পড়ল সেই বাচ্চাটার কথা। তাকে খুঁজতে আবার কামড়ায় গেলাম। কিন্তু লাশের ভীড়ে কোথাও দেখতে পেলাম না। ফিরে এলাম। বাইরে বেড়িয়ে এত ভয়াবহ দৃশ্য। কামরা সব মুচড়ে গিয়েছে। যেন কেউ গায়ের জোড়ে ধরে মুচড়ে দিয়েছে। মাল গাড়ির উপর উঠে গিয়েছে অনেক কামরা’।এরপর নিজেকে টানতে টানতে কোনও রকমে রেল লাইনের ধারে পাশের রাস্তায় ওঠেন সুকান্ত হালদার। সেখানে একটি গাড়ি বালাসোর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। বালাসোর থেকে কলকাতা আসার বাস পান। কিন্তু বাসে ফেরার টাকা ছিল না। দুর্ঘটনার কথা শুনে বাস চালক দয়া করে কলকাতা পৌঁছে দিয়েছেন। সারারাত বাসের মধ্যে দুচোখ এক হয়নি। বারবার ভেসে উঠছিল ট্রেনের ছবি। এত ভয়াবহ যেন সাক্ষাৎ যমপুরী। ভাবতে ভাবতে কখন ভোর হয়ে গেল খেয়াল করেননি। বাইরে তাকিয়ে দেখেন সূর্য উঠেছে। কলকাতার রাস্তায় ধীরে ধীরে চাঞ্চল্য ফিরছে। জীবন বোধহয় একেই বলে। দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর রক্তসন্ধ্যা পিছনে পড়ে রইল। জীবন এগিয়ে চলেছে। নতুন সূর্য উঠল। শুধু মনে আসছিল, সেই তিন মাসের ফুটফুটে বাচ্চাটার কথা। সে এই নতুন দিনের নতুন সূর্য দেখতে পেল তো ?
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box