Pradip sarkar nati Binodini: অসমাপ্ত থেকে গেল নটি বিনোদিনীর কাজ, চলে গেলেন প্রদীপ সরকার

তাঁর ছবিতে বাঙালিয়ানার ছাপ সবসময় থাকত। পরিণীতা থেকে হেলিকপ্টার ইলা। প্রতিটি ছবিতে বাংলার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর পরিচালনায় পরিণীতার মতো ক্লাসিক উপন্যাস বলিউডে উপস্থাপিত হয়েছে। এবার এমন বাঙালি ব্যক্তিত্ব নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছিলেন, যাঁর সঙ্গে বাংলার আবেগ জড়িত। নটি বিনোদিনী। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ছবি করতে গেলে অনেক গবেষণা প্রয়োজন। সেটাই চলছিল। বিনোদিনীর চরিত্রে তিনি কঙ্গনা রানাওয়াতকে ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের প্রকল্প পূর্ণ হল না। চলে গেলেন পরিচালক প্রদীপ সরকার। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। কয়েকদিন আগে সতীশ কৌশিকের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগে ফের ধাক্কা লাগল বলিউডে। হিন্দি ছবির জগতের প্রদীপ নিভে গেল।

অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিডনি ডায়ালিসিস চলছিল। তার উপর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছিল। সুস্থ করার চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শুক্রবার ভোররাতে মারা যান তিনি। এদিন সন্ধ্যায় সান্তাক্রুজে প্রদীপ সরকারের নশ্বর দেহ দাহ করা হবে। ২০০৫ সালে পরিণীতা ছবির হাত ধরে পরিচালনায় আসেন প্রদীপ সরকার। তার আগে অবশ্য বিজ্ঞাপনের কাজ করতেন। প্রথম ছবি সুপারহিট। বাংলা মানেই শুধু দুর্গাপুজো আর হাওড়া ব্রিজ নয়, সেটা প্রথম ছবিতে তুলে ধরে ছিলেন। তবে তাঁর প্রতিটি ছবির বৈশিষ্ঠ্য হল নারীত্বের জয়গান। ১৯৫৫ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতায় জন্ম। সিনেমার পোস্টার আঁকা দিয়ে কেরিয়ার শুরু। সেখান থেকে বম্বে পাড়ি। ধীরে ধীরে বিধু বিনোদ চোপড়ার প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মিউজিক ভিডিও পরিচালনা থেকে অ্যাড ফিল্ম। সব কিছু করেছেন জীবনের প্রথম ধাপে। সিনেমায় প্রথম কাজ ‘মুন্না ভাই এম বি বি এস’ দিয়ে। সহকারী পরিচালক ছিলেন। সম্পাদনার কাজও করতে পারতেন।

পরিচালিত ছবি


পরিণীতা (২০০৫)

লাগা চুনরি মে দাগ (২০০৭)

লফঙ্গে পরিন্দে (২০১০)

মর্দানি (২০১৪)

হেলিকপ্টার ইলা (২০১৮)

যখন রাত্রি নামে (২০২১)

প্রতিটি ছবিতে কেন্দ্র বিন্দুতে থাকতেন নারী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিণীতা হোক বা মর্দানীর শিবানী শিবাজী রাও। মহিলাদেরকেই তিনি ছবির হিরো বানাতেন। ২০০৫ সালে রিলিজ করে পরিণীতা। বিদ্যা বালান আত্মপ্রকাশ করেন। একইসঙ্গে প্রদীপ সরকারের প্রথম ফিচার ফিল্ম। পরিণীতার ললিতা চরিত্রটি লেখনির মাধ্যমে বলিষ্ঠ করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে আরও বেশি শক্তিশালী করে পেশ করেন প্রদীপ সরকার। পরের ছবি লাগা চুনরি মে দাগ। সেখানেও হিরো এক মহিলা। যিনি পরিবারকে ভালো রাখতে পতিতাবৃত্তির মতো পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ছবি চলেনি। তবে সিনেমাটির দমদার চিত্রনাট্য এখনও মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে।

রানী মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেছিলেন মর্দানী। শিবানী শিবাজী রাও এক মহিলা পুলিশ কীভাবে নারী পাচারের মতো ঘৃন্য অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, সেটাই ছবির বিষয়। ছবি দারুণ হিট হয়। সমালোচকদেরও পচ্ছন্দ হয়েছিল মর্দানী। হেলিকপ্টার ইলা তেমন চলেনি ঠিকই কিন্তু আজকের জেনারেশনের মায়েরা নিজেদের রিলেট করতে পেরেছিলেন। সন্তান মানুষ করতে একজন মায়ের লড়াই ছবিতে তুলে ধরেছিলেন প্রদীপ সরকার। এই সিনেমাতে কাজলের ছেলের অভিনয় করেন ঋদ্ধি সেন। এবার তাঁর ছবির সাবজেক্ট ছিলেন বিনোদিনী দাসী। কিন্তু সেই কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে গেলেন তিনি। হিন্দি ছবির জগতে মিঠুন চক্রবর্তীর পর প্রদীপ সরকার ‘দাদা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.