Dakshineswar kali mandir: কেন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির তন্ত্র সাধনার উপযুক্ত ? 167 তম প্রতিষ্ঠা দিবসে জেনে নেওয়া যাক ইতিহাস

১৮৪৮ সালে প্রথম মন্দির তৈরির ভাবনা মাথায় আসে রানি রাসমণির মাথায়। নৌকাযোগে কাশী যাওয়ার পথে স্বপ্নাদেশ পান রানিমা। আর কাশী গিয়ে কাজ নেই। গঙ্গার পাড়ে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে অন্নভোগ নিবেদনের আদেশ প্রাপ্তি। সেই আদেশ পাওয়ার পর কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। কিন্তু নামলেই তো আর হল না। সমাজে যে অনেক বাধা। মন্দির তৈরির কাজে হাত দিতেই একের পর এক বাধা আসতে থাকে। একে জাতে শুদ্র, তার উপর একলা বিধবা মেয়ে মানুষ। তিনি মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন, তা সেই সময়ের ব্রাহ্মণ শ্রেণী মানবে কেন ? তবে যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন জানবাজারের রানিমা।

প্রথম বাধা জমি নিয়ে

প্রথমে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে জমি খোঁজা শুরু হয়। ভাটপাড়ায় একটি জমি পচ্ছন্দ হয় রানিমার। জনৈক বলরাম সরকার জমি দিতে রাজি হন। কিন্তু গোঁড়া ব্রাহ্মণদের রোষে পড়ে পিছিয়ে যান। শেষমেশ জমি কেনা হল দক্ষিণেশ্বর গ্রামে। আগে জায়গাটার নাম ছিল শোণিতপুর। বানরাজাদের রাজত্বের মধ্যে ছিল এই গ্রাম। বানরাজা সেখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে। সেই শিব লিঙ্গের নাম অনুসারে জায়গার নাম হল দক্ষিণেশ্বর। সেখানেই মিলল জমি। এক লপ্তে ৬০ বিঘা। জমির মালিক কোন হিন্দু নন। খ্রিস্টান। নাম হেস্ট্রি সাহেব। কলকাতা হাইকোর্ট তখন ছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানকার নামজাদা উকিল ছিলেন। জমি কিনতে খরচ হল ৫৫ হাজার টাকা। জমির একটি বিশেষত্ব ছিল। জমির গড়ন অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো। অর্থাৎ তন্ত্র মতে সাধানার উপযুক্ত স্থান।

দ্বিতীয় বাধা গঙ্গার বান

রানিমা প্রথমে ঠিক করেন দেশীয় মিস্ত্রি দিয়েই মন্দির তৈরি হবে। সেই মতো ধীর গতিতে চলতে লাগল কাজ। গঙ্গার বান এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তখন বাধ্য হয়েই রানি মা মন্দির তৈরির বরাত দিলেন ম্যাকিনটস বার্ন কোম্পানিকে। ১৮৫০ সালে তারা মন্দির নির্মাণে হাত দিল। প্রথমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বরাতে কাজ শুরু হয়। কাজ দ্রুত গতিতে এগতে দেখে রানি খুশি হন। দক্ষিণেশ্বর মন্দির নির্মাণের যাবতীয় তাদের দেন রানিমা। সেই মতো কালী মন্দির, শিব মন্দির, বিষ্ণু মন্দির থেকে শুরু করে ঘাট বাঁধানো, নহবত খানা তৈরি, পুরো জায়গাটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা সব কাজ ওই কোম্পানি করেছিল। আজও ওই কোম্পানির নেতাজি সুভাষ রোডের অফিসে গেলে মন্দির তৈরির ইতিহাস পাওয়া যায়। মন্দির যাতে কোনওভাবে নদী গর্ভে না যায়, তার জন্য বিশেষ টেকনিকের প্রয়োগ করেছিল ওই কোম্পানি। আর এই সাফল্যের জন্য তারা রানিমার কাছ থেকে ৯ লাখের বেশি টাকা পেয়েছিল।

গড়ে উঠল মন্দির। চারকোনা চাতাল। লম্বা ৪৪০ ফুট, চওড়া ২২০ ফুট। চাতালের পূর্ব দিকে মন্দির। গর্ভগৃহে দেবী মূর্তি দক্ষিণমুখী। দেবী ভবতারিণী নামে পুজো পান। মন্দির প্রাঙ্গণের পশ্চিমদিকে ১২ টি শিবমন্দির। সবার মুখ পূর্ব দিকে। প্রতিটি মন্দিরের পৃথক পৃথক নাম। এখানে নিত্যপুজো ও নিত্য নৈবেদ্য প্রদান করা হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন লুচি ভোগ দেওয়া হয়েছিল। ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১২৬২ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ৩১ মে ১৮৫৫ সালে স্নানযাত্রার দিন দক্ষিণেশ্বর মন্দির (Dakshineswar kali mandir) প্রতিষ্ঠা হয়।

No comments:

please do not enter any spam link in the comment box

Powered by Blogger.