চন্দনে চর্চিত জবা পদে দিব আমি গো
বসন পরো মা, পরো বসন পরো মা।
বসন পরো, পরো মা গো, বসন পরো মা।
বহুযুগ আগে রামপ্রসাদের লেখনিতে মায়ের উলঙ্গ রূপ তুলে ধরা হয়েছিল সুন্দরভাবে। মা কেন সন্তানের কাছে নগ্ন ? মায়ের কেন এমন রূপ ? মহাকালীর নানা রূপ আমরা দেখি। কখনও তিনি শ্যামা, কখনও দক্ষিণা কালী। কিন্তু মায়ের পড়নে কোনও বসন কেন নেই ? কী বলছে শাস্ত্র ? আর দু’দিন পর দীপান্বিতা অমাবশ্যায় মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠবে বাংলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মায়ের মন্দিরে পূজিত হবেন মা মহাকালী। কিন্তু সবার মনে প্রশ্ন মা কালী কেন নগ্ন রূপে পূজা নিয়ে থাকেন ? শাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা কী ?
মা কালী নগ্ন কেন ?
প্রথমেই জানিয়ে রাখী, হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, আদ্যাশক্তি মহামায়া নিরাকার। যা মানুষের কল্পনার বাইরে। কিন্তু ভক্তরা নিজেদের সুবিধার জন্য সাধারণ ইন্দ্রিয়বোধ্য রূপে কল্পনা করে থাকে। দেবী কালীর প্রচলিত মূর্তি তেমনি একটি কল্পনা। সেই কল্পিত রূপেই সাধারণ মানুষ পূজা করে। যদিও এই রূপ কল্পনায় বিশেষ তাৎপর্য আছে। মা কালীর মূর্তির প্রতিটি অংশের ব্যাখ্যা আলাদা রকম।দশমহাবিদ্যা বলে যে দশজন সিদ্ধা দেবী, তাদের প্রথমজন হলেন কালী। এই কালীর বিভিন্ন রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। যথা, দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী প্রভৃতি। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপটিই বাংলায় বেশিমাত্রায় পুজো পায়। এই মূর্তিতে মায়ের একহাতে ছিন্ন নরমুন্ড ও খড়্গ। অন্যহাতে বরাভয়। মায়ের গাত্রবর্ণ মেঘের ন্যায় এবং তিনি দিগম্বরী। আর তার সঙ্গে তিনি নগ্ন।
বাংলায় প্রায় সব দেব-দেবী বসন পরে থাকেন। শুধুমাত্র মা কালীকে বিভিন্ন অলঙ্কারে সাজানো হলেও তার অঙ্গে কোনো পোশাক থাকে না। এমনকি প্রসাদী ভক্তিগীতিতে তাই মাকে বসন পরার আর্তি শোনা যায়। কিন্তু শাস্ত্র বলছে অন্য কথা। মায়ের এই নগ্ন থাকার প্রসঙ্গে এক গভীর অর্থ আছে। আর সেটাই আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
কালী শব্দের উৎপত্তি কাল থেকে। কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ কালী। কাল বলতে বোঝায় সময়। অর্থাৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যিনি কলন করেন তিনি মহাকাল। মা কালী নিজের ত্রিনয়ন দিয়ে সত্য, শিব আর সুন্দর দেখতে পাই। আসলে কালী অনন্তের প্রতীক। ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মুন্ডমালা পাওয়ার তাই প্রশ্ন উঠছে না। এ আসলে মানুষের অহং ছিন্ন করার প্রতীক। তার এক হাতে তাই খড়্গ। সেই খড়্গের আঁকা চোখ প্রজ্ঞার প্রতীক। অন্য হাতে বরাভয়। এই কল্পিত রূপেই শক্তির দ্বিবিধ রূপের সমাহার। একদিকে তা বিনাশী, অন্যদিকে তা সৃষ্টিরও প্রতীক বটে। এই আদিশক্তি বা আদ্যাশক্তি ‘সময়ের থেকেও উচ্চতর’। আর সেই অনন্তকে কোনও জাগতিক বস্ত্রের আবরণে আবৃত করা যায় না। দেবী তাই নগ্নিকা। আবার কোনও কোনও মতে বলা হয় কালী শক্তির প্রতীক, শক্তিকেও কোনও বসন বা আচ্ছাদনে আবদ্ধ করা যায় না। সেই কারণেই মা কালী নগ্নিকা হিসেবেই পূজিত হন।
No comments:
please do not enter any spam link in the comment box